সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চিহ্নিত হলো ভুনবীর বধ্যভূমি। সদ্য চিহ্নিত বধ্যভূমিতে প্রথমবারের মতো শহীদদের স্মরণে জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সংরক্ষন করা হয় এর মাটিও। বধ্যভুমি চিহ্নিত করার পর সেটি সংরক্ষনের দাবি জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
ভুনবীর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন ছমরু জানান, ১৯৭১ সলে ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে ও কৃষি অফিসের গোদামে পাক বাহিনী ক্যাম্প করে। ভূনবীর, সাঁতগাও, লাহারপুর, আলিশারকুল, মির্জাপুর এলাকার বহু মানুষকে ধরে এনে এখানে নির্যাতন করে। নির্যাতন শেষে কিছু কিছু লোককে এর আসে পাশে নানাভাবে হত্যা করে এবং কিছু লোককে শ্রীমঙ্গল ১০নং এলাকায় শ্রমকল্যাণ অফিসের এনে নির্যাতন শেষে সাধুবাবার বটতলিতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
সে সময় মুক্তিকামী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় নিয়োজিত অঘোর ভট্টাচার্য্য, আশ্বব উল্লাহ ও মন্ধন সরকারসহ আরো দুইজনকে ধরিয়ে দেয় স্থানীয় রাজাকাররা। তাদের নির্যাতন শেষে ভুনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম পাশের জমি দিয়ে তাদের দৌঁড়াতে বলে পাক সেনারা। তাঁরা যখন দৌঁড়ানো শুরু করেন তখন পেছন থেকে গুলি ছুঁড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাদের। এর পর অনেকদিন সেখানে তাদের লাশ পড়েছিলো। লাশ গলে সেখানেই মিশেছে। শেয়াল কুকুর লাশ টেনে নিয়েছে। একজনের একটি হাত প্রায় দুইশতগজ দূরে নিয়ে যায়। পরে ঐ স্থানেই হাতটিকে গ্রামের মানুষ মাটি চাপা দেয়, বিষয়টি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়ার ছেলে নুরু উদ্দিন।
তিনি জানান, সেদিন তিনি ডান পাশের একটি জমিতে কৃষি কাজ করছিলেন। হঠাৎ চোখে পড়ে কয়েকজন মানুষ দৌঁড়াচ্ছেন। একটু পরেরই রাস্তা থেকে গুলি ছুড়তে থাকে পাকসেনারা। সাথে সাথে জমিতে লুঠিয়ে পড়েন তারা। এরপর অনেক দিন সেখানেই পড়েছিল লাশ। লাশের পঁচা গন্ধে এর আশপাশ দিয়ে নাক চেপে চলা ফেরা করতেন লোকজন।
মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম জানান, যুদ্ধ থেকে এসে তিনি শুনেছেন ইউনিয়নের আশে পাশে বেশ কিছু মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়। কিন্তু সঠিক জায়গা তাঁর জানা ছিলনা। সোমবার বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তীর বধ্যভূমির মাটি সংগ্রহে আসলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী ভাষ্য থেকে সঠিক জায়গাটি চিহ্নিত হয়।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক বিকুল চক্রবর্তী জানান, সাঁতগাও বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী আকবর আলী, অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী ও কাউছার আহমদ রিয়নের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ মানুষদের স্মরনাপন্ন হন তিনি। তাদের ভাষ্য মতে, ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়ার ছেলে নুর মিয়াকে খোজে বেরকরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবদিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে সকলের সামনে প্রত্যক্ষদর্শী নুর মিয়া ঘটনাস্থল দেখিয়েদেন। এ সময় তাঁর মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মারক প্রদর্শনীর জন্য ঐ স্থানের মাটি সংগ্রহ করেন। এ সময় উপস্থিত সবাইকে নিয়ে ঐ স্থানে বিজয় দিবসের দিনে প্রথমবারের মতো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বলে তিনি জানান।
শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক বিকুল চক্রবর্তী, ঐ জমির মালিক মো: শাহাব উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী, সাংবাদিক কাউছার আহমদ রিয়ন, পল্লি চিকিৎসক মো: আকবর আলী, মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়ার ছেলে নুর মিয়া ও রুনু মিয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
জমির মালিক মো: শাহাব উদ্দিন জানান, সরকার এখানে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করলে তিনি জমি দিয়ে সহায়তা করবেন।